04/06/2024
অফ টপিক:
অফিস থেকে বাসায় ফেরার পরে আমি টিউশন করি। কোনদিন সরাসরি অফিস থেকে টিউশনে চলে যাই, আবার কোনদিন বাসায় যাই, মিনিট দশেক রেস্ট করি তারপরে টিউশনের জন্য রওনা হই। আজকের দিনটা ছিল দ্বিতীয় ক্যাটাগরির, অর্থাৎ অফিস শেষে বাসায় এসে ১০ মিনিট বসলাম। তারপর বের হলাম টিউশনের উদ্দেশ্যে। স্বভাবতই যেদিন বাসায় যেয়ে তারপর টিউশনে যাই কিছুটা দেরি হয়। ৮ টার টিউশন, ৮:৩০/৯:০০ টা বেজে যায়। তাই রিক্সা ছাড়া বিকল্প নেই। বলে রাখা ভাল, আমার টিউশন দয়াগঞ্জে।
সাধারণত রিক্সা ভাড়া ৪০/৫০ টাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। তবে কখনো কখনো বাধ্য হয়ে ৬০ টাকা দিয়েও যেতে হয়।
আজ যেহেতু দেরী হয়েছে রিক্সায় যাওয়ার বিকল্প না দেখে বাসা থেকে বের হয়েই রিক্সা খুঁজতে শুরু করলাম। রাস্তায় প্রচন্ড জ্যাম থাকার কারণে কোনো রিক্সা দয়াগঞ্জের দিকে যেতে রাজি হচ্ছিল না। তাই জোরে হাটা শুরু করলাম আর প্রতিটা রিক্সাওয়ালা মামাকে ডেকে জিজ্ঞেস করতে থাকলাম যাবে কি না। নাহ, কেউ যাবে না। হাঁটতে হাঁটতে অর্ধেক পথ পার করে ফেলেছি, একজন রিক্সাওয়ালা মামা যাবেন। কথায় বোঝা না গেলেও ২,৩ বার মাথা ঝাঁকানোতে বুঝতে পারলাম তিনি যাবেন। তবে আমার যেতে ইচ্ছে হলো না। পেছনে ফিরে হাঁটা শুরু করব, এমন সময় মনে হলে পা সায় দিচ্ছে না, অর্থাৎ এরকম একজন মানুষকে দেখেও হেঁটে পালিয়ে যাওয়ার মত অপরাধ করতে রাজি হচ্ছিলো না আমার পা, ও মস্তিষ্ক।
ফিরে মামাকে জিজ্ঞেস করলাম, 'কত নিবেন?'
তিনি উত্তর দিলেন, তবে কিছু বোঝা গেলো না। সম্ভবত উনি কথা বলতে পারেন না। তবে এক পর্যায়ে বুঝতে পারলাম ৪০ টাকা নিবেন।
আমি জিজ্ঞেস করলাম, 'মামা তুমি কি রিক্সা চালাতে পারো?'
মাথা ঝাঁকিয়ে বোঝালো, তিনি পারেন। তবে তিনি যে মাথা ঝাঁকিয়ে পারার কথা বোঝালেন কি না তাও বোঝার উপায় নেই, কারণ শুধু তার মাথা নয়, পুরো শরীর অনবরত কাঁপছে। এই কাঁপুনি যে কতটা ভয়ঙ্কর তা এই ভিডিও দেখে বোঝার উপায় নেই।
আমি কিছু না ভেবেই রিক্সায় চড়ে বসলাম। চিন্তা করে রাখলাম, যদি দেখি তিনি রিক্সা চালাতে পারছেন তবে পুরো রাস্তা যাব, তা নাহলে নেমে উনাকে সাধ্যমত সাহায্য করব।
রিক্সা চালাতে শুরু করলেন, আর আমার ভিশন থেকে ভিশনভাবে মন খারাপ হতে থাকল এই ভেবে যে আমরা কতটা অকৃতজ্ঞ! এই মানুষটা যার কি না চিকিৎসা দরকার, পাশাপাশি পরিবার ও সমাজের সাপোর্ট দরকার, যিনি কোনভাবেই রিক্সা চালানো ডিজার্ভ করেন না কারণ যেকোনো সময় তিনি নিজের এবং অন্য কারো মৃত্যুর কারণ হতে পারেন কোনো দুর্ঘটনার শিকার হয়ে, অথচ তিনি রিক্সা চালাচ্ছেন। আশেপাশের কেউ একটু খেয়াল পর্যন্ত করছে না। তিনি জীবনের সাথে যুদ্ধ করছেন, হালাল উপায়ে উপার্জনের চেষ্টা করছেন। এদিকে আমরা বসে থেকে থেকে বোর হচ্ছি, সৃষ্টিকর্তার প্রতি অভিমান করছি, দোষ দিচ্ছি।
আমার এই লেখার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে যারা পড়ছেন তাদের কাছে অনুরোধ, এই ধরনের মানুষ দেখলে এড়িয়ে যাবেন না। তাদের সেবা নিতে না পারলেও তাদেরকে যতটুকু সম্ভব সাহায্য করুন, এগিয়ে আসুন। আর নিজেদের যা আছে তার জন্য শুকরিয়া করুন, সৃষ্টিকর্তার নিকট কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন।