23/06/2023
অগ্নিসঙ্গম: Nirmalendu Goon
আমি কীভাবে অগ্নির সঙ্গে সঙ্গম করেছিলাম, সেই গল্পটা বলি।
একদিন ঝড়ের রাতে ঈশ্বর এসে উপস্থিত হলেন আমার ঘরে।
আমি সারাদিনের পরিশ্রম শেষে, তক্তপোষে আরাম করে শুয়ে
নিজের মনে, নিজের সঙ্গেই খেলা করছিলাম। আমার গাত্র
এবং মন উভয়ই ছিল নিরাবরণ। তিনি আমার ঘরে প্রবেশ করলেন
একটি চমৎকার দৃষ্টিনন্দন আলোকবর্তিকার রূপ ধরে এবং
গায়েবি ভাষায় বললেন : “আমি আপনাকে শিশ্নমুক্ত করতে এসেছি,
দয়া করে আপনি দ্রুত প্রস্তুতি গ্রহণ করুন।
আমার সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ছিল বন্ধুত্বপূর্ণ, তাই যেভাবে শুয়েছিলাম,
সেরকম শুয়ে থেকেই বললাম : খুব ভালো কথা, কিন্তু
আমি কি জানতে পারি, কী আমার অপরাধ?
ঈশ্বর বললেন : “হা, পারেন। আপনি সংশ্লিষ্ট যন্ত্রটিকে সৃষ্টির চেয়ে
অনাসৃষ্টির কাজেই বেশি ব্যবহার করেছেন। আপনি সামাজিক
নিয়ম-কানুন এবং স্থান-কাল-পাত্রের ভেদ মান্য করেন নি।”
তার কথা শুনে আমার খুবই রাগ হলো। এ কি ঈশ্বরের যোগ্য কথা?
নিয়ম-কানুন, স্থান-কাল-পাত্রভেদ, মানে? তিনিও যদি মানুষের
মতোই কথা বলবেন, তা হলে আর ঈশ্বর কেন? একটু রাগতস্বরেই
আমি বললাম : আপনি কি জানেন না, আমি অভেদপন্থী?
ঈশ্বর বললেন : ‘জানি। আমি ভুল করে আপনাকে অসময়ে
পৃথিবীতে পাঠিয়েছিলাম। আপনি আদিমকালের মানুষ;
এ-যুগ আপনার নয়। আমি আপনার প্রতি সম্মানবশত আপনাকে
উঠিয়ে নিতে নিজে এসেছি এজন্যে যে, আপনি আমার প্রিয়-কবি,
অন্যথায় আমি আমার যমদূতকেও পাঠাতে পারতাম।’
আমি বললাম : ‘বেশ, ভালো কথা। কিন্তু ভুলটা যেহেতু আমার নয়,
আপনার, তাই আমার একটা শেষ-শর্ত আপনাকে পূরণ করতে হবে,
তারপর আমি আপনার কথা রাখবো।’
‘বলুন কী শর্ত!’ –ঈশ্বর জানতে চাইলেন।
আমি আমার দীর্ঘ লালিত একটি গোপন স্বপ্নকে মনের অতল থেকে
মুক্তি দিয়ে, কামানাজড়িতকণ্ঠে বললাম :
‘শুধু একটি বারের জন্য আমি আপনার সঙ্গে মিলিত হতে চাই।’
মনে হলো, আমার প্রস্তাব শুনে প্রচণ্ড ঝাকুনি খেয়ে
আলোকবর্তিকাটি ঘূর্ণিহাওয়ায় দুলে উঠলো।
স্থির হলে পর, গায়েবিভাষায় ঈশ্বর বললেন : ‘আমি অন্তর্যামী,
আমি আপনার এ-আকাক্ষার কথা অনেক পূর্ব থেকেই জানি,
কিন্তু তা কখনই পূরণ হবার নয়। আমি নারী, পুরুষ বা কোনো
সঙ্গমযোগ্য প্রাণী নই, আমি হচ্ছি অগ্নি, সর্বপাপঘ্ন অগ্নি আমি,
আমি নিচ্ছিদ্র। আপনি আমার সঙ্গে মিলিত হবেন কী ভাবে?’
আমি বললাম : ‘সে ভাবনা আমার, আমি আমার প্রবেশপথ তৈরি করে নেব।
আমি শুধু আপনার সম্মতিটুকু চাই।’
ঈশ্বর বললেন : সাবধান, আপনি আমার দিকে অগ্রসর হবেন না।
আর এক পা-ও এগুবেন না, ভষ্ম হয়ে যাবেন।
প্রজ্বলন্ত আলোবর্তিকার মধ্যে নিজেকে নিক্ষেপ করে আমি বললাম :
ইতিপূর্বে বহুবার, বহুভাবে আমি ভস্ম হয়েছি, ভস্মের ভয় দেখিয়ে
আপনি আমার সঙ্গে ছলনা করছেন কেন? —আমি চাই আপনিও
আমার আনন্দের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করুন।’
নায়াগ্রা প্রপাতের অফুরন্ত জলধারার মতো আমার স্খলিত বীর্যধারায়
যখন শীতল হলো আলোকবর্তিকার সেই অগ্নিজ্বলা দেহ,
তখন গায়েবিভাষা রূপান্তরিত হলো মধুক্ষরা মানবীভাষায়।
ঈশ্বর বললেন : “আমাকে অমান্য করার অপরাধে, দেখবেন,
একদিন আপনার খুব শাস্তি হবে।’
আমি অপসৃয়মাণ সেই আলোকবর্তিকার দিকে তাকিয়ে বললাম ;
কুচযুগ শোভিত, হে অগ্নিময়ী দেবী, তবে তাই হোক।’